
টিকিট কেটে ফুটবল খেলা দেখতে না পেরে বিক্ষুব্ধ সর্মথকদের তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিন স্টেডিয়াম। দিনের আলো ফুটতেই ফুটে উঠেছে সেই ধ্বংসলীলা। এ তাণ্ডবে সেখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরও অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক স্টেডিয়াম পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন,অতিরিক্ত দর্শকের চাপেই এই ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
গত শুক্রবার জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল টেকনাফ উপজেলা বনাম রামু উপজেলা। এদিন সকাল থেকেই স্টেডিয়ামে প্রবেশ শুরু করে ফুটবলপ্রেমী হাজার হাজার দর্শক।
বেলা ১টার পর পুরো স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হলে স্টেডিয়ামের আশপাশে অবস্থান নেন হাজারো ফুটবলপ্রেমী। এক পর্যায়ে টিকিট কেটে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে না পেরে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারা। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে স্টেডিয়ামের মূল ভবন ও প্রেস বক্সের দিকে। এ সময় প্রেস বক্সের জানালার কাঁচ ভেঙে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরীসহ আহত হন অন্তত ৪০ জন।
হামলা করা হয় দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপরও।
এক পর্যায়ে যৌথ বাহিনী মাঠে প্রবেশ করে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেই। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ম্যাচ রেফারি খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন সমর্থকেরা। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে পুরো স্টেডিয়ামে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেন।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সাংবাদিক এম আর মাহবুব।
তিনি অকপটে স্বীকার করেন, ধারণার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি টিকিট বিক্রি করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ সর্মথকেরা হামলা করে স্টেডিয়ামের প্রতিটি স্থাপনা ভাঙচুর করে, লুটপাট করে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল, ধ্বংস করে দেওয়া হয় কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন সময়ের সোনালী অর্জনের ট্রফিগুলো।
তিনি আরো বলেন, ইজারাদারকে ৭ হাজার টিকিট বিক্রি করতে বলা হলেও তারা কয়েকগুন বেশি টিকিট বিক্রি করেন। এ ছাড়া একটি চক্র গোপনে টিকিট ছাপিয়ে তা ছড়িয়ে দেন যা এই বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরো টুর্নামেন্ট পরিচালনার জন্য ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে টিকিটের ইজারা দেওয়া হয় স্টেডিয়ামপাড়া এলাকার মনির, বাবু,সেফায়েত মুন্না ও ফাহিম নামের একটি সিন্ডিকেটকে। যার নেপথ্যে ছিলেন আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি শাহজাহান আনসারী নামের এক আওয়ামী লীগ দোসর।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনার জন্য পর্যপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিতির জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ক্রীড়া সংস্থাকে নির্দেশনা দিলেও কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মাত্র ৩০ জন আনসার পুলিশ দিয়ে ফাইনালে পরিচালনার নির্দেশ দেন। ফলে শুরুতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে ব্যর্থ হন তারা।
জেলার ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ হামলার পেছনে রয়েছে রোহিঙ্গারাও। কালের কণ্ঠের সঙ্গে যোগাযোগ হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েকজন মাঝির। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা জানান, রোহিঙ্গারা অত্যন্ত ফুটবলপ্রেমী। যেখানে ফুটবল খেলা হয়, সেখানেই তারা ছুটে যায়। শুক্রবার কক্সবাজার শহরে এসেছিলেন ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করার জন্য। তবে খেলা দেখতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এই হামলায় অংশ নেন।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এমন ঘটনা আর কখনোই দেখেনি। এটি কক্সবাজারের ক্রীড়া ক্ষেত্রে একটি কলঙ্ক হয়ে থাকবে।
এদিকে শনিবার দুপুরে স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও জেলার পুলিশ সুপার সাইফউদ্দিন শাহীন। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
স্টেডিয়ামে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণপূর্ত বিভাগ এটি পরিদর্শন করে আগামী দুই দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দিবে। সুত্র: কালেককন্ঠ
পাঠকের মতামত